watch sexy videos at nza-vids!
SUSPENSE WORLD SUDARSHAN
গেঁয়ো ভুতের গল্প :

ক্যাটেগরি: স্মৃতিচারণ ভুতুড়ে
দুদিন ধরে বেশ টিপটিপানি বৃষ্টি হল । কেমন একটা ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব চারদিকে । মনে পড়ছে মার বলা সব আষাঢ়ে গল্পগুলো । ছোট থাকতে ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলেই মাকে ঘিরে বসত আমাদের ভাই বোনদের গল্পের আসর । মোমবাতি জ্বালিয়ে আধোঁ আলো ছায়ায় আমরা সব ভুতু ভুতু বড় বড় চোখ করে ঘিরে রাখতাম মাকে, আর মা বলে যেত অদ্ভুত সব ভুতের গল্প । তালপুকুরের ভুত, আখের ক্ষেতের ভুত, পুশকল ..। পুশকল কিজানো ? সে এক মহা ধুরন্ধর ভুত ! আমাদের গ্রামের দিকে মেছো ভুতগুলিকেই পুশকল বলত । হাট বাজারের দিনে কেউ একটু রাত করে বাড়ী ফিরতে গেলেই নাকি পিছু নেয় বাবাজীরা ! ছোকছোকে জিভ নিয়ে পিছু নেবে তারা । তোমার মাছও নেবে আবার পুতেও রেখে দেবে কোমর অব্দি কাঁদাজলে ! মারএক মামা নাকি পড়েছিল এক পুশকল বাবাজির খপ্পরে । গল্পটা তাহলেবলি, মা যেভাবে বলেছিল সেভাবে,
“ আমার সেজোমামা, একদিন গেছিলো আরেকটু হইলেই ! বাজার কইরা আসতেদেরী । যারা গেছিলো সব আইসা পড়ছে, সে তো আসে না । আমরা ছোটরাতো ঘুমায়া পড়সি । পরে শুনি এই কাহিনী ! হইছে কি, বাবুর আবার তাসের নেশা আছিলো । সে গিয়াই বসছে তাস খেলতে । হাট যখন উঠে উঠে তখন নাকি দুইটা ইলিশ কিন্না ফিরতাছে, অর্ধেক পথ আইছেআর তার মনে হয় পিছে যেন কে আসে, কেমন খসমস শব্দ খালি । সে থামে, শব্দও থামে । সে নাকি বুঝছিল যেকাম তো সুবিধার না ! এইডা তো পুশকল ! তার নাকি অনেক সাহস আছিল, হাঁটতে হাঁটতেই নাকি সে জিগায় তখন,
- কে তুই ? কি চাস ? .. কোন শব্দ নাই , আবার জিগায় মামা,
- কি চাস ? কে তুই, কথা ক ! .. তখননাকি পিছন থিকা ঘর্ঘর কইরা উঠে ঐটা,
- মাছ দে .. মাছ খামু ..
মামায় তো কয় হইছেনি কাম ! এইবারনাকি সে সাহস কইরা কয়
- এইখানে না, আমার লগে আয় । পুশকলও নাকি আসে, তখন মামা বাড়িআইসা পড়সে, ভিটায়ও উইঠা গেসে । তাড়াতাড়ি দৌড়াইয়া রান্নাঘরে গেছে মাছ লইয়া, দেখে বড় মামী রান্তাছে কি জানি, মামায় কয়,
- বৌদিরে কামতো একটা হইছে !
মামী কয়, কি হইছে ?
- আরে একটা পুশকল না ছাতা পিছন পিছন আইছে !
- কও কি ? কই ঐটা ।
- আরে চিল্লাইও না, ছেনিটা গরম কইরা দাও শিগ্গির !
- ছেনি দিয়া কি হইব ?
- দাওনা তুমি আমি দেখতাছি, এইটারে এক্টার ব্যবস্থা না করলে জালাইব অনেক !
বড় মামী ছেনি গরম কইরা দিল, মামায় তো ছেনি লইয়া বেড়ার ফাঁক দিয়া ঐটারে জিগায়,
- কিরে আসস ? মাছ খাবি না ? তখন নাকি মামীও শুনে ঐটারে কইতে কেমন একটা ঘরঘর কইরা কয়,
- খামু ! মাছ দে ! মাছ দে !
তখন মামায় নাকি কয়,
- বেড়ার ফাঁক দিয়া জিব্বা দে, যেই বলা অম্নি নাকি এক হাত লম্বা একটা জিব্বা আইসা সাপের মত ঢুকে বেড়ার ফাঁক দিয়া লকলক করতে করতে ! মামীতো দাঁত লাইগা ফিট ! আর মামায় তখনি নাকি ছেনি দিয়া এক্কেরে ছ্যাকা দিয়া দেয় জিব্বায় ! ঐটা তো বলে হুম হাম কইরা কি বিকট চিৎকার বলে ! চেচামেচিতে সব নীচে আইসা পড়ছি আমরা, কি হইসে কি হইসে ! সবাই দেখি মামী শুইয়া আছে একপাশে কাইত হইয়া, মামায় তার মুখে জল দিতাছে । সবাই জিগায় কি হইছে কিহইছে ! মামা আগেই আমাগো সব ছোট যারা তাদের বলল উপরে নিয়া যাইতে, সবাইরে বলল কিচ্ছু না, কিচ্ছু হয় নাই ! কিন্তু কেউ বাইরে যাইবা না, খবরদার ! সকালের আগে কেউ দরজা খুলবা না !বড়রা তখনি নাকি বুঝছিল, কিছু নাকইয়া আমাগো নিয়া সব চইলা গেল । আমরা তো সব ডরায়া শেষ । সকাল হইতেই সব রান্নাঘরের বারান্দায়ভীড় ! কি হইছিল ! কি হইছিল ! আইসা সব দেখি কি, একটা কাক মইরা পইড়া আছে, ঠিক ঐখানেই ।”
আমি পরে জিজ্ঞাসা করতাম মাকে, মা কাক হইল কেন ? মা খালি বলত এইসব ভুতটুত নাকি মরার সময় কাক হইয়াই মরত । আমি তো এমনিতেই বাঁচি না ভুতের ডরে, তার উপর আবার কাকরূপী পুশকল ! খালি ঘ্যানঘ্যান করতাম মা ! মা ! এইগুলা কি আসলেই আছে ? মা হেসে ফেলত আমার ভয় বুঝে, বলত আরে ধুর! এইগুলা সব গল্প, কি না কি দেখছে ! .. কিন্তু তারপরও ভয় লাগত মনে মনে, ভয়টা আরো বেশী লাগত যখন আমার জ্ঞানী বড় ভাই রিসার্চ করত পুশকল নিয়ে, আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে দিদিকে বলত, “বুঝলি আমার তো মনে হয় এইগুলা সব অতৃপ্ত জেলে, অভাবে অনটনে মারা গেছে, বা মাছ ধরতে গিয়া । কিন্তু মাছের মায়া ছাড়ে নাই মরার পরেও । ”

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

আমি ভূতের গল্প বড় ভালবাসি। তোমরা পাঁচ জনে মিলিয়া গল্প কর, সেখানে পাঁচ ঘন্টা বসিয়া থাকিতে পারি। ইহাতে যে কিমজা! একটা শুনিলে আর-একটাশুনিতে ইচ্ছা করে, দুটা শুনিলে একটা কথা কহিতে ইচ্ছা করে। গল্প শেষ হইয়াগেলে একাকী ঘরের বাহিরে যাইতে ইচ্ছে হয় না। তোমাদের মধ্যে আমার মতন কেহ আছ কি না জানি না, বোধ হয় আছে। তাই আজ তোমাদের কাছে একটা গল্প বলি। গল্পটা একখানি ইংরেজি-কাগজে পড়িয়াছি। তোমাদের সুবিধার জন্য ইংরেজি নামগুলি বদল করিয়া দিতে ইচ্ছা ছিল, কিন্তু গল্পটি পড়িলেই বুঝিতে পারিবে যে শুধু নাম বদলাইলে কাজ চলিবে না। সুতরাং ঠিক যেরূপ পড়িয়াছি, প্রায় সেইরূপ অনুবাদ করিয়া দেওয়াই ভাল বোধ হইতেছে।
‘স্কটল্যাণ্ডের ম্যাপটারদিকে একবার চাহিয়া দেখিলে বাঁ ধারে ছোট ছোট দ্বীপ দেখিতে পাইবে। তাহার উপরেরটির নাম নর্থ উইস্ট্‌, নীচেরটির নাম সাউথ্‌ উইস্ট্। এর মাঝামাঝি ছোট-ছোট আর কতকগুলি দ্বীপ দেখা যায়। এ সেকালের কথা, তখত স্টীম্ এঞ্জিনও ছিল না, টেলিগ্রাফ্‌ও ছিল না। আমার ঠাকুরদাদা তখন এর একটি দ্বীপে স্কুলে মাস্টারি করিতেন।’
‘সেখানে লোক বড় বেশি ছিলনা। তাদের কাজের মধ্যে কেবল মাত্র মেষ চরান, আর কষ্টে সৃষ্টে কোন মতে দিন চলার মত কিছু শস্য উৎপাদন করা। সেখানকার মাটি বড় খারাপ; তারি একটুএকটু সকলে ভাগ করিয়া নেয় আর জমিদারকে খাজনা দেয়।… এরা বেশ সাহসী লোক ছিল। আর ঐরকম কষ্টে থাকিয়া এবং সামান্য খাইয়াও বেশ একপ্রকার সুখে স্বচ্ছন্দে কাল কাটাইত।’
‘এই দ্বীপে এল্যান্‌ ক্যামেরন নামে একজন লোক ছিলেন, তাঁহার বাড়ি গাঁ থেকে প্রায় এক মাইল দূরে।এল্যানের সঙ্গে মাস্টারমহাশয়ের বড় ভাব, তাঁর কাছে তিনি কত রকমের মজার গল্প বলিতেন। হঠাৎ একদিন ক্যামেরন বড় পীড়িত হইলেন, আর কিছুদিন পরে তাঁহার মৃত্যু হইল। তাঁহার কেউ আপনার লোক ছিল না, সুতরাং তাঁহার বিষয়-সমস্ত বিক্রি হইয়া গেল। তাঁর বাড়িটা কেহই কিনিতে চাহিল না বলিয়া তাহা অমনি খালি পড়িয়া রহিল।’
‘এর কয়েক মাস পরে একদিন জ্যোৎন্সা রাত্রিতে ডনাল্ড্‌ ম্যাকলীন বলিয়াএকটি রাখাল ঐ বাড়ির পাশ দিয়া যাইতেছিল। হঠাৎ জানালার দিকে তাহার দৃষ্টি পড়িল, আর সে ঘরের ভিতরে এল্যান্‌ ক্যামেরনের ছায়া দেখিতে পাইল। দেখিয়াই ত তার চক্ষু স্থির! সেখানেই সে হাঁ করিয়ার দাঁড়াইয়া রহিল। তাহার চুলগুলি খ্যাংরা কাঠির মত সোজা হইয়া উঠিল, ভয়ে প্রাণ উড়িয়া গেল, গলা শুকাইয়া গেল।’
‘শীঘ্রই তাহার চৈতন্য হইল। ঐরকম ভয়ানক পদার্থের সঙ্গে কাহারই বা জানাশুনা করিবার ইচ্ছা থাকে? সে ত মার দৌড়! একেবারে মাস্টার-মশাইয়ের বাড়িতে। তাঁহার কাছে সব কথা সে বলিল। মাস্টারমহাশয় এ-সব মানেননা। তিনি তাহাকে প্রথম ঠাট্টা করিলেন, তারপরে বলিলেন, তাহার মাথায় কিঞ্চিৎ গোল ঘটিয়াছি; আরো অনেক কথা বলিলেন-বলিয়া যাথাসাধ্য বুঝাইয়াদিতে চেষ্টা করিলেন যে, ঐরূপ কিছুতে বিশ্বাস থাকা নিতান্ত বোকার কার্য।’
‘ডনাল্ড্‌ কিন্তু ইহাতে বুঝিল না, সে অপেক্ষাকৃত সহজ বুদ্ধি বিশিষ্ট অন্যান্য লোকের কাছে তাহার গল্প বলিল। শীঘ্রই ঐ দ্বীপের সকলেই গল্প জানিতে পারিল। ঐ-সব বিষয় মীমাংসা করিতে বৃদ্ধরাই মজবুত। তাঁহারা ভবিষ্যতের সম্বন্ধে ইহাতে কত কুলক্ষণই দেখিতে পাইলেন।’
‘ঐ দ্বীপের মধ্যে কেবলমাত্র মাস্টারমহাশয়ের কাছে খবরের কাগজ আসিত। মাসের মধ্যে একবার করিয়া কাগজ আসিত আর সেদিন সকলে মাস্টারমহাশয়ের বাড়িতে গিয়া নূতন খবর শুনিয়া আসিত। সেদিন তাহাদের পক্ষে একটা খুব আনন্দের দিন। রান্নাঘরে বড় আগুন করিয়া দশ-বার জন তাহার চারিদিকে সন্ধ্যার সময় বসিয়া কাগজের বিজ্ঞাপন হইতে আরম্ভ করিয়া অমুক কর্তৃক অমুক যন্ত্রে মুদ্রিত হইল ইত্যাদি পর্যন্ত সমস্ত বিষয়ের তদারক ও তর্কবিতর্ক করিত। শেষে কথাগুলি সকলেরই একপ্রকার মুখস্থ হইয়াছিল, এবং পড়া শেষ হইলে ঐ কথাটা প্রায় সকলে একসঙ্গে একবার বলিত।’
‘এই-সকল সভায় রাখাল, কৃষক,গির্জার ছোট পাদরি প্রভৃতি অনেকেই আসিতেন। গ্রামের মুচি ররীও আসিত। ররী ভয়ানক নাছোড়বান্দা লোক। একটি কথা উঠিলে তাহাকে একবার আচ্ছা করিয়া না ঘাঁটিলে সহজে ছাড়িবে না।’
‘ডনাল্ড ম্যাকলীনের ঐ ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পরে একদিন সকলে এইরূপ সভা করিয়া বসিয়াছে, মাস্টারমহাশয় চেঁচাইয়া তর্জমা করিতেছেন, এমন সময়একজন আসিয়া বলিল যে, এল্যান্‌ ক্যামেরনের ছায়া আবার দেখা গিয়াছে। এবারে একজন স্ত্রীলোক দেখিয়াছে। এ রাখাল যে স্থানে যেভাবে উহাকে দেখিয়াছির, এও ঠিক সেইরকমদেখিয়াছে।’
‘এরপর আর পড়া চলে কি করিয়া! মাস্টারমহাশয় চটিয়া গেলেন এবং ঠাট্টা করিতে লাগিলেন। ররী তৎক্ষাণাৎ তাহার প্রতিবাদ করিল। ররী কোন কথাই ঠিক মানে না। এবারেওমাস্টারমহাশয়ের কথাগুলি মানিতে পারিল না। প্রচণ্ড তর্ক উপস্থিত। ভূতের কথা লইয়া সাধারণভাবে এবং ক্যামেরনের ভূতের বিষয় বিশেষভাবে বিচার চলিতে লাগিল। আর সকলে বেশ মজা পাইতে লাগিলেন। কিন্তু রীরর মেজাজ গরম হইয়া উঠিল। সে বলিল-’
‘দেখ মস্টারের পো, যতই কেন বল না, আমি এক জোড়া নতুন বুট হারব, তোমার সাধ্যি নেই আজ দুপুর রেতেওখান থেকে গিয়ে দেখে এস।’
‘সকলে করতালি দিয়া উঠিল। মাস্টারমহাশয় হাসিয়া উড়াইয়া দিতে চাহিলেন, কিন্তু ররী ছাড়িবে কেন? সে সকলের উপর বিচারের ভারদিল। তাহারা এই মত দিল যে, মাস্টারমহাশয় যখন গল্পগুলি মানিতেছেন না, সে স্থলে তাঁহার যে নিদেনপক্ষে তিনি যে এ মানেন নাতা প্রমাণ করিয়া দেন।’
‘মাস্টারমহাশয় দেখিলে, অস্বীকার করিলে যশের হানি হয়। তিনি বলিলেন, “যাব বই কি? কিন্তু আমি ফিরে এলেও এর চাইতে আর তোমাদের জ্ঞান বাড়বে না।”
ররী-‘আচ্ছা দেখা যাউক।’
মাস্টারমহাশয়-‘ভাল, ওখানেগিয়ে আমি কি কর্‌ব?’
ররী-‘ওখানে গিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে তিনবার বলবে-এল্যান্‌ ক্যামেরন আছে গো!’ কান জবাব না পাওফিরে এস, আমি আর ভূত মানবো না।
মাস্টারমহাশয় হাসিয়া বলিলেন, ‘এটা ঠিক জেনো যে, এল্যান, সেখানে থাকলে আমার কথার উত্তর দিবেই। আমাদের বড় ভাব ছিল।’
একজন বলিল, ‘তাকে যদি দেখতে পাও, তা হলে মুচির কাছে যে ও টাকা পেতে, সে কথাটা তুল না।’ এ কথায় সকলে হাসিয়া ফেলিল, ররী একটু অপ্রস্তুত হইল।
‘এইরূপে হাসি-তামাশা চলিতে বলিল-‘বারটা বাজতে কুড়ি মিনিট বাকি। তুমি এখন গেলে ভাল হয়; তাহলেই ঠিক ভূতের সময়টাতে পৌঁছতে পারবে।’
‘বেশ করিয়া কাপড়-চোপড় জড়াইযা মাস্টারমহাশয় যষ্টি হস্তে সেই বাড়ির দিকে চলিলেন। মাস্টারের যাইবার সময়ে সকলেই দু-একটি খোঁচা দিয়া দিল এবং স্থির করিল, ফলটা কি হয় দেখিয়া যাইবে।’
‘রাত্রি অন্ধকার। এতক্ষণ বেশ জ্যোৎস্না ছিল, কিন্তু এক্ষণে কাল কাল মেঘে আসিয়া চাঁদকে ঢাকিয়া ফেলিতেছে। মাস্টার চলিয়া গেলে সকলে আরম্ভ করিল যে, সমস্ত রাস্তাটা সাহস করিয়া যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব কি না। ছোট পাদরি বলিল যে তিনি হয়ত অর্ধেক পথ গিয়াই ফিরিয়া আসিয়া যাহা ইচ্ছা বলিবেন, তখন আর কাহারো কিছু বলিবার থাকিবে না। ইহা শুনিয়া মুচির মনে ভয় হইল, জুতা জোড়াটা নেহাত ফাঁকি দিয়া নেয়, এটা তাহার ভাল লাগিল না। তখন একজন প্রস্তাব করিল যে, ররী যাইয়া দেখিয়া আসুক।’
‘প্রথমে ররী ইহাতে আপত্তিকরিল। কিন্তু উহার বক্তৃতায় পরে রাজি হইল। সকলে তাহাকে সাবধান করিয়া দিল যেন মাস্টার তাহাকে দেখিতে না পায়, তারপর সে বাহির হইল। খুব চলিতে পারিত এই গুণে শীঘ্রই সে মাস্টারকে দেখিতে পাইল। ররী একটু দূরে দূরে থাকিতে লাগিল। রাস্তাটা একটা জলা জায়গার মধ্যে দিয়া। একটি গাছপালা নাই যে মাস্টার ফিরিয়া চাহিলে তাহার আড়ালে থাকিয়া বাঁচিবে।’
‘পরে মাস্টারমহাশয় যখন ঐ বাড়িতে পৌঁছিলেন, তখন ররী একটু বুদ্ধি খাটাইয়া খানিকটা ঘুরিয়া বাড়ির সম্মুখে আসিল। সেখানে একটু নিচু বেড়া ছিল, তাহার আড়ালে শুইয়া পড়িল।’
‘সে অবস্থায় দূতের কার্য করিতে যাইয়া তাহার অন্তরটা গুর গুর করিতে লাগিল। মাস্টারমহাশয় ছিলেন বলিয়া, নইলে সে এতক্ষণ চেঁচাইয়া ফেলিত। কষ্টে সৃষ্টে কোন মতে প্রাণটা হাতে করিয়া দেখিতেছে কি হয়। মনে করিয়াছে, মাস্টারমহাশয় যেরূপ ব্যবহার করেন, তাহাদেখা হইয়া গেলেই সে বাহিরহইবে।’
‘গ্রামের গির্জার ঘড়িতে বারটা বাজিল। সে বেড়ার ছিদ্র চাহিয়া দেখিল যে মাস্টারমহাশয় নির্ভয়ে দরজার সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইয়াছেন।’
‘মাস্টারমহাশয় গলা পরিষ্কার করিলেন এবং একটু শুষ্ক স্বরে বলিলেন-‘এল্যান্‌ ক্যামেরন আছে গো!’-কোন উত্তর নাই।
‘দু-এক পা পশ্চাৎ সরিয়া একটু আস্তে আবার বলিলেন, ‘এল্যান্‌ ক্যামেরন আছ গো!’-কোন উত্তর নাই।
‘তারপর বাড়িতে আসিবার রাস্তাটি মাথা পর্যন্ত হাঁটিয়া গিয়া থতমত স্বরে অর্থচিৎকার অর্থ আহ্বানের মত করিয়া তৃতীয়বার বলিলেন, ‘এল-ক্যামেরন-আছ-।’ তারপরআর উত্তরের অপেক্ষা নাই।-সটান চম্পট।
‘কি সর্বনাশ! কোথায় মাস্টারের সঙ্গে বাড়ি যাইবে, মাস্টার যে এ কি করিয়া ফেলিলেন মুচি বেচারীর আর আতঙ্কের সীমা নাই।তবে বুঝি ভূত এল! আর থাকিতে পারিল না। এই সময়েতার মনে যে ভয় হইয়াছিল, তারই উপযুক্ত ভয়ানক গোঁ গোঁ শব্দ করিতে করিতে সেমাস্টারমহাময়ের পেছনে ছুটিতে লাগিল।
সেই ভয়ানক চিৎকার শব্দ মাস্টারমহাশয় শুনিতে পাইলেন। পশ্চাতে একপ্রকার শব্দও শুনিতে পাইলেন। আর কি? ঐ এল্যান্‌ ক্যামেরন! ভয়ে আরো দশগুণ দৌড়িতে লাগিলেন। ররী বেচারা দেখিল বড় বিপদ! ফেলিয়াই বুঝি গেল। কি করে, তারও প্রাণপণ চেষ্টা। মাস্টারমহাশয় দেখিলেন, পাছেরটা আসিয়া ধরিয়াই ফেলিল। তাঁহার যে আর রক্ষা নাই, তখন তিনি সাহসভর করিলেন এর খুব শক্ত করিয়া লাঠি ধরিয়া সেই কল্পিত ভূতের মস্তকে ‘সপাট’-সাংঘাতিক এক ঘা! তারপর সেটাও যেন কোথায় অন্ধকারে অদৃশ্য হইল।’
‘ভূতটা যাওয়াতে এখন একটু সাহস আসিল, কিন্তু তথাপি যতক্ষণ গ্রামের আলোক না দেখা গেল, ততক্ষণ থামিলেননা। গ্রামে প্রবেশ করিবার পূর্বে সাবধানে ঘাম মুছিয়া ঠাণ্ডা হইয়া লইলেন। মনটা যখন নির্ভয় হইল, তখন ঘরে গেলেন-যেন বিশেষ একটা কিছু হয় নাই। অনেক কথা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করা হইল, তিন সকলগুলিরই উত্তরে বলিলেন’-
‘ঐ আমি যা বলেছিলাম, ভূতটুত কিছুই ত দেখতে পেলাম না!’
‘এরপর মুচির জন্য সকলে অপেক্ষা করিতে লাগিল। মাস্টারকে তাহারা বলিল যে, সে স্থানান্তরে গিয়াছে, শীঘ্রই ফিরিয়া আসিবে।’
‘আধ ঘণ্টা হইয়া গেল, তবু মুচি আসে না। সকলে মুখ চাওয়া চাওয়ি করিতে লাগিল। চিন্তা বাড়িতে লাগিল, ক্রমে একটা বাজিল।তারপর আর থাকিতে পারিল না, মুচির অনুপস্থিতির কারণ তাহারা মাস্টারমহাশয়কে বলিয়া ফেলিল। মাস্টারমহাশয় শুনিয়া চিৎকার করিয়া উঠিলেন। লাফাইয়া উঠিয়া লণ্ঠন হাতে করিয়া দৌড়িয়া বাহির হইলেন এবং সকলকে পশ্চাৎ আসিতে বলিয়া দৌড়িয়া চলিলেন।’
সকলেরই বিশ্বাস হইর, মাস্টারমহাময়ের বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পাইয়াছে। হৈ চৈ কাণ্ড! সকলেই জিজ্ঞাসা করে, ব্যাপারটি কি? তাড়াতাড়ি ঘরের বাহির আসিয়া তাহারা মাস্টারকে দাঁড়াইতে বলিতে লাগিল। তাঁহাদের শব্দ শুনিয়া কুকুরগুলি ঘেউ ঘেউ করিয়া উঠিল। কুকুরে গোলমালে গাঁয়ের লোক জাগির। সকলেই জিজ্ঞাসা করে, ব্যাপারখানা কি?’
‘এই সময়ে মাস্টারমহাশয় জলার মধ্য দিয়ে দৌড়িতেছেন। মাথা ঘুরিয়াগিয়াছে- কেবল পুলিস-ম্যাজিস্ট্রট-জুরী-ইত্যাদি ভয়ানক বিষয়মনে হইতেছে। তাঁহার লণ্ঠনের আলো দেখিয়া অন্যেরা তাঁহার পশ্চাৎ আসিতেছে।’
‘সকলে তাঁহার কাছে আসিয়া তাঁহাকে ধরিল এবং ইহার কারণ জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল। মাস্টারমহাশয়ের উত্তর দিবার পূর্বেই সেই মাঠের মধ্য হইতে গালি এবংকোঁকানি মিশ্রিত একপ্রকার শব্দ শুনা যাইতে লাগিল। কতদূর গিয়া দেখা গেল, একটা লোক জলারধারে বসিয়া আছে। লণ্ঠনের সাহায্যে নির্ধারিত হইল যে এ আর কেহ নহে, আমাদের সেই মুচি। সেইখানে বেচারা দুই হাতে মাথা চাপিয়া বসিয়া আছে আর তাহাদের মাস্টারমারের উদ্দেশে গালাগালি দিতেছে। তাহার নিকট হইতে সকলে সমস্ত শুনিল।’
‘শেষে অনুসন্ধানে জানা গেল যে ঐ বাড়ির জানালার ঠিক সম্মুখে একটা ছোট গাছ ছিল। তাহারই ছায়া চন্দ্রের আলোকে দেয়ালে পড়িত। আশ্চর্যের বিষয় এই যে সেই ছায়ার আকৃতি দেখিতে ঠিক ক্যামেরনের মুখের মত। সেদিন চন্দ্র ছিল না, মাস্টারমহাশয় সেইছায়া দেখিতে পান নাই।’

ঘটনাটা আমার এক বড় ভাইয়ের মুখ থেকে শুনা,
সত্যি বলতেছি এজন্যে যে ,কারণ আমি বিশ্বাস করি ,উনি একজন শক্ত মনের মানুষ।এবং উনি যা দেখেছেন,তা ঠিক দেখেছেন।ঘটনাটা এরকম,
উনার এস,এস,সি পরীক্ষা শেষ হয়েছে।পরীক্ষার পর ছুটিতে উনি উনার
মামাবাড়ি খুলনায় যাবেন।উনি সিলেট থেকে রওয়ানা দিয়ে রাত সাড়েনটায় খুলনা পৌচ্ছান।শহর উনার মামাবাড়ি যাওয়ার রাস্তায় যাওয়ার পথে প্রায় ১০ মিনিটের মত টিলার মাঝখান দিয়ে যেতে হ্য়।রাতে তিনি কোন রিকশা না পেয়ে একাই হেটে রওয়ানা হন,একটু জায়গা যাওয়ার পর উনি উনার একটু সামনে একজন বৃদ্ধ লোককে দেখতে পান।
সামনে একজন লোক দেখায় উনি ভাবেন যে উনার সাথে কথা বলে বলে উনার মামাবাড়ি পরযন্ত চলে যাবেন। তাইউনি উনার হাটার গতি বাড়িয়ে দিয়ে লোকটিকে ধরতে চান।কিন্তু লোকটিও ওর হাটার গতি বাড়িয়ে দেয়,এবং একটু পর রাস্তার একটি মোড় পার হয়ে যায়।
তখন তিনি ঐ মোড়ের কাছে এসে দেখেনযে, সামনে ঐ লোকটি নেই,এবং সামনে অনেকটা সরু রাস্তা যা একজন বৃদ্ধ লোকের পক্ষে এত তাড়াতাড়ি পেরোনো সম্ভব নয়।তাই উনি এদিক ওদিক তাকিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখেনলোকটি উনার ঠিক পেছনে এবং উনার দিকে তাকিয়ে হাসতেছে।লোকটি কিছুটা ভাসমান অবস্হায় ছিল, আর চোখটা খুবই ভীতিকর ছিল।উনার পিছনে লোকটিকে এভাবে দেখে উনি অজ্ঞান হয়ে
ঐখানেই পড়ে যান।
কিছুক্ষন পর একদল লোক এ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে উনাকে এভাব
পেয়ে উনার মামার বাড়ি পৌচ্ছে দেয়।
ঘটনাটা এমনিতেই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
(বি:দ্র: আমি খুলনা শহর সম্পকে তেমন কোন তথ্য জানিনা

2960